পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে যা জানতে হবে
বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তির সময়ে আপনার অনলাইন কাজগুলো আরও স্মার্টলি সম্পূর্ন করার জন্য প্রয়োজন একটি ল্যাপটপ। পড়াশোন, অফিস কাজ, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং কিংবা বিনোদনের
জন্য প্রয়োজন একটি ল্যাপটপের। বর্তমানে ভালো কনফিগারেশনের নতুন ল্যাপটপের দাম আকাশ ছোয়া। সেই কারণে অনেকে পুরাতন বা সেকেন্ডহ্যান্ড ল্যাপটপ কেনার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ব্যবহৃত ল্যাপটপ অনেক সমস্যা থাকার জন্য কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় না জানলে আপনি অনেক বড় ক্ষতির মুখে পরতে পারেন। তাই আপনি যদি একটি পুরাতন ল্যাপটপ কিনতে চান তবে অবশ্যই এই বিষয় গুলো জেনে নিবেন।
পেজ সুচিপত্র: পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে যা জানতে হবে
- ল্যাপটপ কেনার উদ্দেশ্য নির্ধারন করুন
- বাজেট নির্ধারন করুন
- পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় লক্ষ রাখবেন
- ল্যাপটপের বাহ্যিক অবস্থা যাচাই করুন
- প্রসেসর চেক করে নিবেন
- র্যাম দেখে নিবেন
- স্টোরেজ বা মেমরি চেক করে নিবেন
- গ্রাফিক্স কার্ড আছে কী না চেক করে নিবনে
- ডিসপ্লে চেক করে নিবেন
- কিবোর্ড ও টাচপ্যাড চেক করুন
- ব্যাটারির অবস্থা যাচাই করুন
- সকল পোর্ট পরীক্ষা করুন
- ওভারহিটিং আছে কিনা দেখুন
- সাউন্ড, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ও ক্যামেরা পরীক্ষা করুন
- অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার চেক করুন
- ব্র্যান্ড ও মডেল যাচাই করুন
- দাম যাচাই ও দরদাম করুন
- রসিদ ও ওয়ারেন্টি নিন
- ইমপোর্টেড ল্যাপটপে সতর্ক থাকুন
- মন্তব্য: পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে যা জানতে হবে
ল্যাপটপ কেনার উদ্দেশ্য নির্ধারন করুন
আপনি কি উদ্দেশ্যে অথাৎ কি কাজ করার জন্য ল্যাপটপ কিনতে চাচ্ছেন তা নির্ধারন
করুন। তা ছাড়া আপনি ভালো ল্যাপটপ কিনতে পারবেন না। কারণ প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা
আলাদা কনফিগারেশনের ল্যাপটপ প্রয়োজন। আপনি কি কাজ করার জন্য ল্যাপটপ কিনতে
চান তা জানুন।
আপনি যদি অনলাইন কাজ বা অফিস কাজ অথবা ব্রাউজিং এর জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান
তাহলে Intel Core i3 বা i5 মানের প্রসেসর, 4 বা 8GB RAM এবং SSD
যুক্ত ল্যাপটপ কিনতে পারেন। আবার আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং বা প্রোগ্রামিং করতে চান
ল্যাপটপ ব্যবহার করে তবে কমপক্ষে Core i5, i7 বা Ryzen 7 প্রসেসর, 16GB RAM
এবং SSD থাকা উচিত।
গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং বা গেমিং এর জন্য আপনার প্রয়োজন গ্রাফিক্স কার্ড
(NVIDIA/AMD) যুক্ত ল্যাপটপ। তাই আপনি আগে ঠিক করুন আপনি কোন কাজ করবে এবং কোন
কনফিগারেশন আপনার প্রয়োজন। তবে HDD নেওয়া থেকে বর্তমানে বিরত থাকা ভালো।
কারন HDD এর তুলনায় SSD ব্যবহার বেশি উপযোগি।
বাজেট নির্ধারন করুন
ল্যাপটপ কেনার জন্য সবচেয়ে যেটা বেশি প্রয়োজন তা হলো বাজেট বা টাকা। তা ছাড়া
আপনি ল্যাপটপ কিনতে পারবেন না। নতুন বা পুরাতন যে ল্যাপটপই কিনেন না কেন অবশ্যই
বাজেট ঠিক রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থ সংকটের কারনেই আমরা পুরাতন ল্যাপটপ কিনার
দিকে পা বাড়ায়। তাই যদি আপনি আর্থিক ভাবে সচ্ছল থাকেন তবে আমি মনে করি নতুন
ল্যাপটপ কেনাই শ্রেয়।
কিন্তু আপনি যদি আর্থিক সমস্যায় থাকেন তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক গুলো জেনে
পুরাতন ল্যাপটপ কিনতে পারেন। উদ্দেশ্য ঠিক করে এবং বাজেদ নির্ধারন করে আপনিও কিনে
নিতে পারবেন আপনার পছন্দের ল্যাপটপটি।
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় লক্ষ রাখবেন
ল্যাপটপের বাহ্যিক অবস্থা যাচাই করুন
ল্যাপটপটি দেখতে কেমন তা দেখুন। বডিতে ফাটল, স্ক্র্যাচ, স্ক্রিন হিঞ্জ ঢিলা বা
পোর্ট ভাঙা আছে কিনা দেখুন। যদি ল্যাপটপের স্ক্রু খোলা বা খোঁচা দেওয়া মনে হয়,
তাহলে বুঝবেন আগে সার্ভিস করা হয়েছে। পুরাতন ল্যাপটপে একটু আকটু দাগ থাকাটা
স্বাভাবিক। তাই এটা নিয়া চিন্তার বিষয় না। তবে বেশি দাগ বা ফাটা থাকলে সেই
ল্যাপটপটি না নিয়া ভালো।
ডিসপ্লের উপর দেখুন যে কোনো ফাটা বা দাগ কিংবা আলো কম বেশি বা ঝাপসা হয়ে আছে
কিনা। এই রকম থাকলে সেই ল্যাপটপ না নেওয়া উত্তম।
প্রসেসর চেক করে নিবেন
বর্তমানে Intel এবং Ryzen এর প্রসেসর বেশ জনপ্রিয়। এগুলোর আবার রয়েছে
অনেক গুলো মডেল। যেমন: Intel Core i3, i5, i7 এমনকি বাইরের দেশ গুলোতে i9 ও চলছে
আবার Ryzen 5, 7 ও রয়েছে তালিকায়। তবে চেষ্টা করবেন এই গুলোর নতুন বা আপডেট
জেনারেশন কেনার। কারন i7 এর 10th জেনারেশনের থেকে i5 এর 13 জেনারেশন অনেক
গুনে ভালো।
বর্তমানে ২০২৫ সালে মার্কেটে ১৪ জেনারেশন আসলেও ১৩ জেনারেশনই বেশি ব্যবহার হচ্ছে।
তাই চেষ্টা করবেন অবশ্যই অবশ্যই আপডেট জেনারেশনের প্রসেসর যুক্ত ল্যাপটপ কেনার।
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে ১৩ জেনারেশন না পেলেও চেষ্টা করবেন ১২ জেনারেশনের
ল্যাপটপ কেনার। আর ভাগ্য ভালো থাকলে এবং ভালোভাবে খোজ করলে ১৩ জেনারেশনও পেয়ে
যেতে পারেন।
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে প্রসেসরের জেনারেশন, স্পিড চেক করে নিবেন।
প্রসেসরের স্পিড GHz এ মাপা হয়। GHz এর অর্থ হলো প্রতি সেকেন্ডে
প্রসেসর কত বিলিয়ন অপারেশন করতে পারবে। যত বেশি GHz তত দ্রুত ল্যাপটপ কাজ করবে।
প্রসেসরের স্পিড নুন্যতম ১.৮ GHz থেকে ৩.৫ GHz এর মধ্যে হতে হবে। তাহলে আপনি
বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেন। এই বিষয়টি অবশ্যই দেখে নিবেন।
র্যাম দেখে নিবেন
RAM হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা সরাসরি ল্যাপটপের স্পিড ও পারফরম্যান্স
নির্ধারণ করে। তাই আপনি অবশ্যই র্যাম চেক করে নিবেন। RAM যত ভালো ও দ্রুত
হবে আপনার ল্যাপটপ তত বেশি মসৃণভাবে চলবে। ল্যাপটপ কেনার সময় চেষ্টা
করবেন 8GB উপরে র্যাম নেওয়ার। কমপক্ষে 8GB RAM থাকলেও আপনি আরামসে
যেকোনো সাধারণ কাজ করতে পারবেন।
তবে তার থেকে বেশি তাকলে আরও দ্রুত কাজ সম্পূর্ন করতে পারবেন। RAM-এর ধরন
বোঝায় তার প্রজন্ম বা গতি কতটা উন্নত এবং গতিশীল।
বাজারে DDR3, DDR4, DDR5 এর র্যাম পাওয়া যায়। বর্তমানে DDR5
এর র্যাম বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এটি দ্রুত, অত্যাধনিক তবে দাম একটু
বেশি। পুরাতন ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে DDR3 বা DDR4 পাবেন।
DDR3 হলে সমস্যা নেই তবে DDR4 হলে বাড়তি সুবিধা পাবেন। এবং DDR5 পেলে তা সবচেয়ে
ভালো। র্যাম চেক করার ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো RAM এর
স্পিড। RAM এর স্পিড MHz এ মাপা হয়। MHz মান যত বেশি হবে RAM তত দ্রুত
ডাটা প্রসেস করতে পারবে। DDR3 হয় ১৩৩৩ থেকে ১৬০০ MHz এর, DDR4 হয়ে
থাকে ২১৩৩ থেকে ৩২০০ MHz এর আবার DDR5 হয় ৪৮০০ MHz বা তার
বেশি।
পুরাতন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে অন্তত 1600 MHz এর উপরে হলে ভালো পারফরম্যান্স পাবেন।
আর একটি বিষয় দেখবেন ল্যাপটপে কতটি RAM স্লট আছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে
আপগ্রেড করতে পারবেন কিনা।
স্টোরেজ বা মেমরি চেক করে নিবেন
স্টোরেজে আপনার সকল ফাইল, সফটওয়্যার ও সিস্টেম ইনস্টল থাকবে। তাই এটি
দেখে কেনা গুরুত্বপূর্ন। ল্যাপটপে সাধারনত HDD বা SSD ব্যবহৃত হয়।
দুটির মধ্যে SSD সব থেকে ভালো। SSD থাকলে ল্যাপটপ অনেক দ্রুত কাজ করবে।
HDD এর চেয়ে SSD প্রায় ৫ গুণ পর্যন্ত ফাস্ট কাজ করবে। আপনার ল্যাপটপে ৫১২ জিবি
থেকে ১ টিবি পর্যন্ত রাখতে পারবেন।
তবে ৫১২ জিবির কম নেওয়া যাবে না। SSD আবার তিন ধরনের হয়। যেমন: SATA
SSD, NVMe SSD, PCIe SSD। এগুলোর মধ্যে NVMe এবং PCIe সব থেকে ভালো এবং
দ্রুত। তবে পুরাতন ল্যাপটপের ক্ষেতে PCIe পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে চেষ্টা
করবেন NVMe SSD আছে এমন ল্যাপটপ কেনার।
গ্রাফিক্স কার্ড আছে কী না চেক করে নিবনে
আপনি যদি গেমিং বা ডিজাইন করার জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে অবশ্যই গ্রাফিক্স
কার্ড থাকতে হবে। গ্রাফিক্স কার্ড দুই ধরনের হয়ে থাকে Integrated GPU
এবং Dedicated GPU। Integrated GPU মানে হলো যেটা প্রসেসরের সাথে যুক্ত
থাকে এবং Dedicated GPU হলো যেটা আপনার ল্যাপটপে আলাদা করে যুক্ত
থাকে।
আরও পড়ুন: আপওয়ার্ক একাউন্ট খোলার নিয়ম
সাধারণ কাজ করার জন্য Integrated GPU যথেষ্ট তবে ডিজাইন বা ভিডিও এডিটিংয়ের
জন্য Dedicated GPU থাকা আবশ্যক। পুরাতন ল্যাপটপে অন্তত 2GB Dedicated
Graphics থাকলে ভালো। পুরাতন ল্যাপটপে GPU অনেক সময় অতিরিক্ত গরম হয়।
তাই ১৫–২০ মিনিট ভিডিও বা গেম চালিয়ে দেখুন যে ল্যাপটপ বেশি গরম হয়
কিনা বা ফ্যানের শব্দ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে কিনা।
ওভারহিটিং মানে GPU এর কুলিং সিস্টেম দুর্বল বা ড্রাইভার পুরনো। এক্ষেত্রে
এই ল্যাপটপটি না কেনা ভালো।
ডিসপ্লে চেক করে নিবেন
ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ডিসপ্লে একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূ বিষয়। ল্যাপটপটি একবার
চালু এবং বন্ধ করে ভালোভাবে দেখে নিন স্ক্রিনে কোনো দাগ, ডেড পিক্সেল বা কালো দাগ
আছে কিনা। কালার জনিত কোনো প্রবলেম আছে কিনা দেখুন। এই রকম সমস্যা থাকলে এড়িয়ে
চলুন। ল্যাপটপে মূলত তিন ধরনের ডিসপ্লে পাওয়া যায়।
যেমন: TN, IPS, OLED বা AMOLED।
পুরাতন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে IPS ডিসপ্লে থাকলে সবচেয়ে ভালো।
ল্যাপটপটির রেজোলিউশন Full HD (১৯২০×১০৮০) হলে এটি হবে আপনার জন্য
বেস্ট ডিল। পুরাতন ল্যাপটপে কমপক্ষে 250 nits ব্রাইটনেস এবং রিফ্রেশ রেট ৬০
হার্জ থাকতে হবে।
কিবোর্ড ও টাচপ্যাড চেক করুন
ল্যাপটপে সব ঠিক আছে কিন্ত কিবোর্ড ও টাচপ্যাড কাজ করছে না তাহলে আপনার
ল্যাপটপ কেনাটা বৃথা। তাই পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে এ বিষয় গুলো দেখে নিবেন।
পুরাতন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে কিবোর্ড বা টাচপ্যাডের বেশি সমস্যা থাকে তাই সব
বাটন ঠিকমতো কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করে দেখুন। টাচপ্যাডের সমস্ত জায়গা দিয়ে কাজ
করে দেখুন ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা। সব ঠিক থাকলে ল্যাপটপটি কিনতে পারেন।
ব্যাটারির অবস্থা যাচাই করুন
আমরা সাধারনত বহনযোগ্য এবং যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ল্যাপটপ কিনি। তাই
ব্যাটারির অবস্থা ভালো থাকা খুবই জরুরী। ল্যাপটপে ব্যাটারি ব্যাকআপ সাধারনত
২ থেকে ৪ ঘন্টা অবদি হয়ে থাকে। কোনো ক্ষেতে আরও বেশিও ব্যাকআপ দিয়ে থাকে। পুরাতন
ল্যাপটপে ব্যাটারি ব্যাকআপ ২ ঘণ্টার কম হলে নতুন ব্যাটারি লাগাতে হতে পারে।
তাই ব্যাটারি হেলথটা চেক করে নিবেন। ২ ঘন্টার অধিক সময় ব্যাকআপ দিলে তা ভালো।
ল্যাপটপটির সাথে এডাপ্টর লাগিয়ে দেখুন ঠিক ভাবে চার্জ নিচ্ছে কিনা। এরপর চার্জার
টেনে কিছুক্ষন চালিয়ে দেখুন চার্জ কমছে কিন। চার্জ লাগিয়ে যদি ল্যাপটপ অন হয় এবং
চার্জার খুলে নিলে বন্ধ হয়ে যায় তবে বুঝতে হবে ব্যাটারি ডেড হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে
এই ল্যাপটপটি না নেওয়া বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে।
অবশ্যই ল্যাপটপটি কত ওয়াট সাপোর্ট করে তা জেনে সে অনুযায়ী এডাপ্ট কিনুন। তাহলে
আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি ভালো থাকবে এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
সকল পোর্ট পরীক্ষা করুন
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার সময় পোর্ট পরীক্ষা করা অনেকেই ভুলে যান কিন্তু এটা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পোর্ট নষ্ট থাকলে পেনড্রাইভ, মাউস, HDMI, ইন্টারনেট কেবল বা
চার্জার সংযুক্ত করা ঝামেলার হয়ে যায়। তাই সব পোর্ট গুলো চেক করে নিবেন। USB
পোর্ট গুলো চেক করতে একটি পেনড্রাইভ বা মাউস লাগান। Windows এ This PC
খুলে দেখুন ডিভাইস দেখাচ্ছে কিনা।
কমপক্ষে 2টা USB পোর্ট ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা তা চেক করুন। HDMI চেক
করতে মনিটর বা LED টিভিতে লাগিয়ে দেখুন ডিসপ্লে আসছে কিনা।আপনি
যদি প্রেজেন্টেশন, ভিডিও বা গ্রাফিক্স এর কাজ করতে চান তবে HDMI ঠিক থাকা
জরুরি। চার্জিং পোর্ট সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এটি চেক করতে চার্জার লাগিয়ে
দেখুন চার্জ লাইট জ্বলে কিনা এবং চার্জ হচ্ছে কিনা। চার্জিং পোর্ট যেন ঢিলা না
হয়ে এতে ভবিষ্যতে ঝামেলা হবে।
ওভারহিটিং আছে কিনা দেখুন
কিছুক্ষণ ব্যবহার করে দেখুন ল্যাপটপ গরম হচ্ছে কিনা। কিংবা ফ্যান থেকে শব্দ
আসছে কিনা শুনুন। যদি এই রকম সমস্যা হয় তবে ভবিষ্যতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। তাই
এই রকম সমস্যা দেখলে আগেই এড়িয়ে যাবেন।
সাউন্ড, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ও ক্যামেরা পরীক্ষা করুন
ল্যাপটপ অন করে ইউটিউবে কোনো গান বা ভিডিও চালিয়ে দেখুন স্পিকার ঠিকঠাক কাজ
করছে কিনা। হেডফোন লাগিয়েও শুনুন হেডফোনে সাউন্ড ঠিকঠাক আসছে
কিনা। সমস্যা থাকলে স্পিকার ফাটা বা ঝিরঝির শব্দ করবে এমন হলে না
নেওয়াটাই উত্তম হবে। করন বর্তমানে স্পিকারের সমস্যা হলে আপনি বড় রকম ঝামেলায়
পরবেন।
Wi-Fi অন অফ করে দেখুন ঠিকঠাক কানেক্ট হচ্ছে কিনা। বর্তমানে নতুন ল্যাপটপ
গুলোতে Wi-Fi 6 এবং Bluetooth 5.2 দেওয়া থাকে। তাই পুরাতন ল্যাপটপের
ক্ষেত্রে এই কনফিগ একটু কমতে পারে। ভিডিও কল কনফারেন্স বা মিটিং করার জন্য ওয়েব
ক্যামেরা খুবই জরুরী। পুরাতন ল্যাপটপে ক্যামেরা নষ্ট বা কাজ না করা অনেক সময়
দেখা যায়, তাই আগেই দেখে নিবেন। যেন পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয়।
অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার চেক করুন
ল্যাপটপে Windows আসল কিনা নিশ্চিত হয়ে নিবেন। ড্রাইভার, অ্যান্টিভাইরাস ও
প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টল আছে কিনা দেখে নিন। মাইক্রোসফট সার্ভিস গুলো ঠিক আছে
কিনা তা যাচাই করুন। চাইলে বিক্রেতার কাছ থেকে নতুন করে Windows ইনস্টল
করিয়ে নিতে পারেন। এতে পরে সমস্যায় পরতে হবে না।
ব্র্যান্ড ও মডেল যাচাই করুন
বাজারে অনেক ব্রান্ডের ল্যাপটপ আছে তার মধ্যে HP, Dell, Lenovo, Asus, Acer এই
ব্র্যান্ডগুলোর ল্যাপটপ সাধারণত ভালো ও টেকসই হয়। প্রতিটি ব্র্যান্ডের সিরিজ ও
মডেল আলাদা পারফরম্যান্স দেয়।
আপনি মডেল নম্বরটি গুগলে সার্চ করে রিভিউ দেখে নিতে পারেন এতে বুঝবেন
পারফরম্যান্স কেমন। আবার আপনি আগে থেকে রিভিউ দেখে কিছু মডেল বাছাই করে নিতেও
পারেন।
দাম যাচাই ও দরদাম করুন
একই কনফিগারেশনের ল্যাপটপ Facebook Marketplace,
Bikroy.com বা
Daraz এ দেখে বাজারদর জেনে নিন।
এরপর বাস্তব অবস্থার উপর ভিত্তি করে দাম ঠিক করুন। অতিরিক্ত সস্তা দাম শুনলে
সাবধান হোন অনেক সময় ভেতরে বড় সমস্যা থাকলে বিক্রেতা কম দাম বলে বিক্রি করতে
চায়। তাই সঠিক দাম জেনে কিনুন।
রসিদ ও ওয়ারেন্টি নিন
ল্যাপটপ কেনার পর যদি সম্ভব হয় ক্রয় রসিদ বা আগের ওয়ারেন্টি কার্ড দেখে
নিবেন। বিক্রেতার কাছ থেকে অন্তত ৩ থেকে ৭ দিনের চেকিং ওয়ারেন্টি নেওয়া
বুদ্ধিমানের কাজ। এতে যদি আপনার ল্যাপটপের কোনো সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে ফেরত
বা পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। তাই এই বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
ইমপোর্টেড ল্যাপটপে সতর্ক থাকুন
অনেক সময় বিদেশ থেকে আনা পুরাতন ল্যাপটপ কম দামে বিক্রি হয়। এই ল্যাপটপ
গুলোকে Refurbished laptop বলে। Refurbished বলতে বুঝায় ল্যাপটপ
গুলোর কোনো সমস্যা থাকলে তা আবার ঠিক করে নতুনের মতো করা হয়। এগুলোর বেশিরভাগই
ভালো হয় তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যাটারি বা কীবোর্ড পরিবর্তিত থাকে। তাই ক্রয়ের আগে
বিক্রেতার কাছ থেকে স্পষ্টভাবে জেনে নিবেন ল্যাপটপটি Refurbished নাকি ব্যবহার
করা।
আরও পড়ুন: মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার উপকারিতা
মন্তব্য: পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে যা জানতে হবে
আমার মতে পুরাতন ল্যাপটপ কেনা অনেক সময় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক সিদ্ধান্ত হতে
পারে, যদি আপনি সচেতনভাবে যাচাই করে নিতে পারেন। একবারে সঠিকভাবে পরীক্ষা করে
নিলে অনেক বছর নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। তাই তাড়াহুড়া না করে ধীরে
সুস্থে সব দিক যাচাই করে রসিদসহ ক্রয় করুন।
মনে রাখবেন, ল্যাপটপ শুধু একটি ডিভাইস নয় এটি আপনার সময়, পরিশ্রম ও তথ্যের
ভরসাস্থল। এই সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে বা আরও কিছু জানার
থাকে তবে কমেন্ট বা যোগাযোগ এর মাধ্যমে জানাবেন। আশা করি আপনি পুরাতন ল্যাপটপ
সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। উক্ত বিষয় গুলো দেখে নিলে আশা করা যায় সঠিক ডিভাইসটি
কিনতে পারবেন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
উদায় ফ্লোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url