প্রাচীনকাল থেকে মানুষ রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়
মেনে এসেছে। তার মধ্যে উন্নতম হলো মধু ও রসুন। যা একসাথে খেলে শরীরের
ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে, রক্ত পরিষ্কার করে, টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করে
ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন নিরাময় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায়। মধু হচ্ছে প্রকৃতির দেয়া সবচেয়ে অন্যতম উপহার এবং রসুনকে বলা হয়
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। এই দুটোই শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এই উপকারী খাবার
খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
আমরা অনেকেই মধু ও রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। আবার খাওয়ার
নিয়মও জানিনা। মধু ও রসুন খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সকালবেলা। ঘুম থেকে উঠে
খালি পেটে এক দুই কোয়া রসুন নিবেন। সাথে এক চামচ বিশুদ্ধ ও খাটি মধু মিশিয়ে
খাবেন। খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট কিছু খাবেন বা পান করবেন না। এভাবে প্রতিদিন
সকালবেলা এটি খাওয়ার অভ্যাস করে নিলে শরীরের ভিতরে থাকা সকল টক্রিন পদার্ধ বের
হয়ে যাবে।
সারাদিন শরীর সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। তবে চেষ্টা করবেন অবশ্যই খাটি মধু খাওয়ার।
বর্তমানে খাটি মধু পাওয়া অনেক কষ্টের তাই অবশ্যই দেখে কিনবেন। অনেকে কাচা রসুন
চিবিয়ে খেতে পারে না তারা চাইলে রসুনের আচার বা অন্য উপায়ে খেতে পারেন তবে এতে
রসুনের গুনাগুন অনেকাংশে কমে আসে। তাই চেষ্টা করবেন কাচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে
তুলতে।
মধু ও রসুন যেভাবে সংরক্ষণ করবেন
মধু ও রসুনকে সংরক্ষণ করেও খেতে পারেন। অনেকে আছে যারা প্রতিদিন আলাদা করে তৈরি
করে খেতে চায় না। তারা চাইলে একদিন মিশ্রন বানিয়ে রেখে সংরক্ষন করে খেতে পারেন।
তার জন্য প্রয়োজন খাটি মধু। আপনি বিশ্বস্ত কোন মাধ্যম হতে গ্রামীন প্রাকৃতিক
মৌচাকের মধু সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধু নিবেন।
ভেজাল মধু দ্বারা অনেক অংশেই এর গুণাগুন কমে যায়। ফলে উপকার না হয়ে আরও ক্ষতির
সম্মখীন হতে পারেন। রসুনের ক্ষেত্রে দেশি রসুন নিবেন এবং চেষ্টা করবেন একটু বড়
সাইজের নেওয়ার।
মিশ্রনটি তৈরি করার জন্য কাচা রসুন ৮-১০ কোয়া খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে ধুয়ে
নিবেন। এবার রসুনগুলোকে একটি পরিস্কার কাচের জারের মধ্যে রাখবেন। খেয়াল
রাখবেন যেন জারের মধ্যে পানি না থাকে। রসুন গুলোকে জারের মধ্যে দিন এবার চার
ভাগের দুই ভাগ মধু ঢালুন। এবং জারের একভাগ অবশ্যই খালি রাখবেন। দিয়ে জারের
মুখ বন্ধ করে রেখে দিন ৭ দিন।
৭ দিন পর জারের মুখটি খুলুন। দেখবেন রসুনের রং সাদা থেকে সোনালি হয়ে
যাবে। এখন চাইলে আপনি প্রতিদিন এক চামচ করে খেতে পারেন। কিন্তু বেশি দিন
সংরক্ষন করতে এক সপ্তাহ পরে জারের মুখ খুলে ভিতরের গ্যাস বের করে দিয়ে আবার
লাগিয়ে দিন। এইরকম ভাবে ১-২ মাস রাখুন। এক্ষেত্রে কিছুদিন পর পর জারের মুখ
খুলে ভিতরের গ্যাস বের করে দিতে হবে নয়ত গ্যাসের প্রেসারে জারটি ফেটে যেতে
পারে।
এখন আপনি প্রতিদিন খেতে পারেন। হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে
কাশি নিরাময় হবে। সাথে কালোজিরাও যুক্ত করতে পারেন। তবে সকাল বেলাতে খাওয়ার
চেষ্টা করবেন।
এভাবে সংরক্ষণ করলে ১ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে আর বেশি সময় সংরক্ষন করতে
ফ্রিজে রাখুন এতে ৩ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে। সবসময় কাচের জারে সংরক্ষন করার
চেষ্টা করবেন। চামচ দিয়ে তুলে খাওয়ার ক্ষেত্রে শুকনো চামচ ব্যবহার করবেন।
পানির স্পর্শে আসলে তারাতারি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর ভেজাল মধু ব্যবহার করলে
রসুনের রং কালো হয়ে যেতে পারে এবং গন্ধ ছড়ায়। এই বিষয় গুলো অবশ্যই খেয়ালে
রাখবেন।
মধু ও রসুনের পুষ্টি উপাদান
রসুনে আছে:
ভিটামিন বি-৬
ভিটামিন সি
ম্যাঙ্গানিজ
সেলেনিয়াম
ফাইবার
অ্যালিসিন
মধুতে আছে:
প্রাকৃতিক চিনি
ভিটামিন
মিনারেল
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
এনজাইম
অ্যামিনো অ্যাসিড
মধু ও রসুনের খাওয়ার উপকারিতা
মধু ও রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা রয়েছে অনেক। ছোট থেকে বড় সকল বয়সের মানুষই
মধু ও রসুন একসাথে খেতে পারেন। মধু, রসুন ও সাথে কালোজিড়া যুক্ত করা যায়।
কালোজিরার ও পুষ্টিগুন রয়েছে অনেক। মহানবি মুহাম্মদ (সা.) বলেন মৃত্য ব্যাতিত
সকল রোগের মহাঔষধ কালোজিড়া। তাই সম্পর্ণ উপকারিতা পেতে মধু ও রসুনের সাথে
কালোজিড়া যুক্ত করতে পারেন। নিম্নে মধু ও রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত জানব।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
মধু ও রসুন চমৎকারি ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রসুনে থাকা অ্যালিসিন
ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ধ্বংস করে। রসুনকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয়ে
থাকে। শরীরের কোন অংশ ক্ষত হলে ক্ষতস্থানে রসুন পেস্ট করে বা খেলে দ্রত নিরাময়
হয়।
মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি নিয়মিত
খেলে ঠান্ডা, কাশি, জ্বর সহ নানান রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। রসুন ও মধু একসাথে
নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এই সকল রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া
যায়।
হৃদ রোগের ঝুকি কমায়
নিয়মিত রসুন খেলে রক্তে কোলেস্ট্রল কমে এবং মধু রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে।
রক্তে থাকা বিভিন্ন টক্সিন শরীর থেকে বের করে দেয়। এতে হার্ট ভালো থাকে।
হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ব্লক বা স্ট্রোকের ঝুকি কমায়। যারা দীর্ঘদিন যাবৎ
হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত রসুন ও মধু একসাথে খেতে পারেন। এতে দ্রুত
সুস্থ হতে পারবেন।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে
রসুন ইনসুলিন উৎপাদন করতে সাহায্য করে এবং মধু রক্তের শর্করার ঠিক রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যান্ত উপকারী। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিন
নিয়ন্ত্রনে এটি খুবই ভালো কাজ করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি পরিমান
মতো খাওয়া উচিত। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে খাবেন।
হজমের সমস্যা দূর করে
মধু ও রসুন একসাথে খেলে পেটের ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে পেট ফাপ ধরা,
গ্যাস জনিত সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করে। এটি পেট পরিষ্কার রাখে এবং
হজম শক্তি বাড়ায়। যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত মধু ও রসুন
একসাথে খেতে পারে এতে গ্যাসের সমস্যা নিরাময় হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
রসুন ও মধু একসাথে খেলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে। রসুন শরীরের অতিরিক্ত চর্বি
ভাঙতে সাহায্য করে। ক্ষুধা নিয়ন্ত্রনে রাখে। যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান তাদের
জন্য এটি খুবই কার্যকারী টনিক। মধু ও রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে সঠিক
নিয়মে গ্রহন করলে কিছুদিনের মধ্যে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলতে শুরু করবে এবং
দ্রুত ওজন কমবে।
ত্বক ও চুলের যত্নে
মধু ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে। ফলে ত্বক আর সুন্দর ও আকর্ষনীয় লাগে।
বিশেষ করে শীতকালে এটি বেশ উপকারী যাদের ত্বক বা ঠোট ফাটে তারা শীতকালে
মধু খেতে পারেন। রসুন জীবানুনাশক হওয়ায় ত্বকের সংক্রমন থেকে রক্ষা করে। মধু ও
রসুন নিয়মিত খেলে ত্বক উজ্জল এবং চুল মজবুত হয়। মধু ও রসুন খাওয়া চুলের
জন্য ভেতর থেকে শক্তিশালী পুষ্টি যোগায়। এতে থাকা ভিটামিন, সালফার ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল পড়া
কমে। নিয়মিত খেলে খুশকি কমে, নতুন চুল গজায় এবং চুল ঘন ও উজ্জ্বল দেখায়।
ইরেকটাইল ডিসফাংশন
রসুন ও মধু শুধু মাত্র সাধারন স্বাস্থের জন্য নয় বরং পুরুষদের যৌন ক্ষমতা
বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা পালন করে। রসুনে থাকা অ্যালিসিন যৌনাঙ্গে
রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। যাদের লিঙ্গে পরিমান মতো রক্ত প্রবাহ না হওয়ার কারণে
ইরেকশন হয় না তার নিয়মিত রসুন খেতে পারেন। রসুন টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে
সাহায্য করে। যা যৌন ইচ্ছা এবং মিলনের সময় বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের টাইমিং
জনিত সমস্যা আছে তারা নিয়মিত রসুন খেলে দ্রুত উপকার পাবেন।
মধুতে আছে বোরন যা পুরুষদের হরমোন ঠিক রাখতে এবং এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে।
মধু খেলে শরীরের দ্রুত শক্তির যোগান দেয় যা যৌন মিলনের সময় সময় বৃদ্ধি করে।
দ্রুত বীর্জপাত জনিত সমস্যার জন্য মধু ও রসুন একসাথে খেলে খুব ভালো উপকার
পাওয়া যায়।
প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন
প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন হলো দ্রুত বীর্জপাত জনিত সমস্যা। রসুন স্নায়ুতন্ত্রকে
শান্ত করে ফলে অতিরিক্ত উত্তেজনা কমে। ফলে বীর্যপাতের সময় বেশি হয়। মধুর
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্নায়ুতন্ত্র শক্তিশালী করে ও মানসিক চাপ কমায় যা সহবাসের
জন্য প্রয়োজন। নিয়মিত মধু ও রসুন একসাথে খেলে ধীরে ধীরে সহনশক্তী বৃদ্ধি পায়
দ্রুত বীর্জপাত জনিত সমস্যার নিরাময় হয়।
ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করে
মধু শরীরে তাৎক্ষনিক শক্তির যোগান দেয়। ফলে দ্রুত শক্তি পাওয়া যায়। রসুন
শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখে। প্রতিদিন নিয়মিত এই মিশ্রন খেলে সারা দিন
শরীর সতেজ থাকে ও মন মানসিকতা ভালো থাকে।
মধু ও রসুনের খাওয়ার সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
রসুন ও মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জানা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সতর্কতা ও
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানাও খুবই দরকার। সাধারনত মানুষ উপকার পাওয়ার জন্য মধু
ও রসুন খেয়ে থাকে। কিন্তু সঠিক নিয়ম জানার কারণে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে
নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই মধু ও রসুন খাওয়ার আগে অবশ্যই সতর্কতা
অবলম্বন করতে হবে। এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো জানা থাকলে চিকিৎসা পেতে
সুবিধা হয়।
একবারে বেশি রসুন খেলে পেট জ্বালাপোড়া, বমি বা গ্যাস হতে পারে।
গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেলে সাবধান থাকতে হবে।
রসুন খেলে অনেক সময় মুখ থেকে র্দুগন্ধ হতে পারে।
প্রতিদিন ১-২ কোয়া রসুন খাওয়া যথেষ্ঠ।
অবশ্যই খাটি মধু খাবেন।
উপসংহারঃ মধু ও রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
মধু ও রসুন খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চললে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে
যায়, হজম ভালো থাকে এবং শরীর ভেতর থেকে শক্তি পায়। প্রতিদিন সকালে খালি
পেটে মধু ও রসুন মিশ্রণ খেলে যে উপকারগুলো পাওয়া যায় তা পুরো আর্টিকেলের
মূল বিষয়গুলোতে আরও সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। নিয়মিত ব্যবহার করলে এটি
শরীরকে ডিটক্স করে এবং দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকার সহায়ক হয়।
মধু ও রসুনের এই প্রাকৃতিক ফর্মুলা শুধু রোগ প্রতিরোধেই নয়, রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ, শ্বাসকষ্ট কমানো এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রেও কার্যকর
ভূমিকা রাখে। তাই নিয়ম মেনে প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে এই মিশ্রণ গ্রহণ
আপনার সুস্থ জীবনযাত্রায় একটি শক্তিশালী অভ্যাস হতে পারে। আরও কিছু জানার
থাকলে বা নতুন কিছু জানতে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ!
একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট।
আমি অনলাইন ইনকাম, ব্লগিং, SEO ও টেকনোলজি নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করি। আমি অনলাইন বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে মানুষকে সাহায্য করি।
উদায় ফ্লোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url