মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার উপকারিতা

মরিঙ্গা বা সজনে গাছ বাংলার মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। এই গাছের পাতা, ফুল, বীজ ও শিকড় সকল উপাদানই ঔষধি গুণে ভরপুর। বর্তমানে সজনে গাছের পাতাকে শুকিয়ে গুরো করে বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে যা বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে মরিঙ্গা পাউডার অত্যন্ত জনপ্রিয়। আজ আমরা মরিঙ্গা বা সজনে পাতার গুড়ো এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে জানব। আশা করি পোষ্টটি পড়ে উপকৃত হবেন।

মরিঙ্গা পাউডার কী?

মরিঙ্গা বা সজনে গাছ দক্ষিণ এশিয়ার এক জনপ্রিয় গাছ যা বিভিন্ন পুষ্টি গুণে ভরপুর। সজনে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা ওলেইফে। এই গাছটি আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলের এক সাধারন ভেষজ উদ্ভিদ। সজনে গাছের ডাটা আমরা সবজি হিসেবে খেয়ে থাকি এবং এর পাতাও আমরা শাক হিসেবে খেয়ে থাকি। এই গাছটিকে মিরাক্কেল ট্রি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সজনে পাতার গুড়োর পুষ্টি উপাদান আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকার থেকে অনেক বেশি। 

এই পাতায় সকল প্রকারের অ্যামিনো অ্যাসিড সহ বিভিন্ন প্রকার খনিজ উপাদান রয়েছে। এছাড়াও মরিঙ্গা পাউডারে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যা আমাদের সকল পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহয়তা করে। এই খাবার দেহের অনেক পুষ্টি সরবরাহ করে যা আমাদের দৈন্দন্দিন পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে এবং একটি সুস্থ দেহ উপহার দেয়। মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মরিঙ্গা পাউডারে কী কী রয়েছে

মরিঙ্গা পাউডার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। মরিঙ্গা পাউডারে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন পাওয়া যায় যা আমাদের শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আসুন জেনে নিই মরিঙ্গা পাউডারে কী কী পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
  • ভিটামিন এ 
  • ভিটামিন বি-১, ২, ৩
  • ভিটামিন সি
  • ভিটামিন ই
  • ক্যালসিয়াম 
  • আয়রন 
  • ম্যগনেসিয়াম 
  • পটাশিয়াম
  • জিঙ্ক
  • অ্যামিনো অ্যাসিড
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
  • ফাইবার
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি।

মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে

মরিঙ্গা পাউডারে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, এ ও আয়রন। যা শরিরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। যার ফলে বিভিন্ন প্রকারের রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়মিত সেবনে সর্দি কাশি, ফ্ল বা ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 

কোলেস্টরল কমায় এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে

মরিঙ্গা গুড়োয় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনলস রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টরল বৃদ্ধি করে। ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে। এতে রক্তের মধ্যে থাকা আপাদানগুলোকে সঠিক ভাবে ভাগ করে। হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে মরিঙ্গা পাউডার অবিশাস্য ভূমিকা রাখে।

রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে

মরিঙ্গা পাউডার রক্তের সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রন করে। যারা দির্ঘদিন যাবৎ ডায়বেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী। এটি রক্তে থাকা শর্করা নিয়ন্ত্রন করায় ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। শর্করার ঘাটতি জনিত রোগ প্রতিরোধ করে। যাদের ডায়বেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের প্রতিদিন মরিঙ্গা গুড়া খাওয়া উচিত।

ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী 

সজনে পাতার গুড়োয় ভিটামিন এ, ই থাকার ফলে ত্বক উজ্জল করে, ব্রনের দাগ দূর করে, মুখের দাগ কমায়, চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে ইত্যাদি। যাদের মুখে অধিক পরিমানে ব্রন, মেশতার দাগ রয়েছে তাদের প্রতিনিয়ত মরিঙ্গা পাউডার খাওয়া উচিত। বর্তমানে চুল পরার সমস্যা নিয়ে অনেকেই ভুগছেন তারা মরিঙ্গা গুড়ো সেবন করলে ইনশাআল্লাহ এই সমস্যা অনেকটাই নিরাময় হবে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

মরিঙ্গা পাউডার সেবনে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। যার ফলে শরীরের চর্বি ভাঙতে শুরু করে ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

মরিঙ্গা পাতায় প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকায় এটি হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাছাড়াও মরিঙ্গা পাউডার পেটের অ্যসিডিটি, প্রদহ ও গ্যাস জনিত সমস্যা দূর করতে অনেক উপকারী।

শরীরে শক্তির যোগান দেয়

অপুষ্টির কারনে শরীরিক দুর্বলতা অনুভব হয়। সজনে পাতায় থাকা আয়রন এবং প্রোটিন শরীরের ক্লান্তি দূর করে। সারাদিন সতেজ অনুভব দেয়। যাদের শারীরিক দূর্বলতা রয়েছে তারা খাটি মধুর সাথে মরিঙ্গা পাউডার মিশিয়ে খেতে পারে। এতে শরীরে পুষ্টির পরিমান বৃদ্ধি পাবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে। 

মস্তিস্ক ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মরিঙ্গা পাউডার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহয়তা করে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে মরিঙ্গা পাউডার খাওয়া খুবই উপকারজনক।

লিভার এবং কিডনির সুরক্ষায় 

সজনে পাতায় থাকা ফাইবার লিভারকে ডিটক্স করে ও লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং শরীরের সকল বর্জ পদার্থ শরীরের  বাইরে বের করে। ফলে শরীরে টক্সিন জমতে পারে না।

হাড় মজবুত করতে 

মরিঙ্গা পাউডারে প্রচুর পরিমানে খনিজ উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম থাকে। যা হাড় সুগঠিত ও শক্ত করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ক্যালসিয়াম বাত ব্যাথা, হাটুর ব্যাথা, জয়েন্টের ব্যাথা সহ সকল হাড়ের সমস্যা দূর করতে অনেক উপকারি। 

মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম

  • প্রতিদিন সকালে বা রাতে কুসুম গরম পানির সাথে ১ চামচ মরিঙ্গা পাউডার মিশিয়ে খাবেন। 
  • মধুর কালোজিরার সাথে মিশ করে খেতে পারেন।
  • শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।
  • শাক হিসেবে সজনা পাতা রান্না করে খেতে পারেন।
  • চাইলে স্মুদি, দই, সালাদ, ওটমিল, সুপের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • আপনার স্বাদ অনুযায়ী বিভিন্ন ভাবে খেতে পারেন। 
  • দিনে ১ থেকে ২ চামচের বেশি খাবেন না। 

মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার অপকারিতা 

  • মরিঙ্গা পাউডারে বেশি পরিমানে ফাইবার থাকায় অতিরিক্ত পরিমানে সেবন করলে পেট ফাপা, গ্যাস, ডায়রিয়া হতে পারে।
  • যাদের প্রতিনিয়ত ব্লাড প্রেসার বা ডায়বেটিসের ঔষধ খাওয়া লাগে তারা মরিঙ্গা পাউডার খেলে রক্তচাপ বা সুগার কমে যেতে পারে।
  • গর্ভবতী নারী বা স্তনদানকারী মায়েরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে  খাবেন।
  • দিনে ১ থেকে ২ চামচের বেশি খাওয়া উচিত না। বেশি পরিমানে খেয়ে নিলে বমি বা মাথা ঘুরতে পারে।
  • মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার ফলে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

উপসঃহার

মরিঙ্গা পাউডার সকল পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার ও প্রাকৃতিক ওষধ। এটি পরিমানমতো সেবন করলে তা শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারি। তবে অতিরিক্ত পরিমানে খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আমরা চেষ্ট করব প্রতিদিন সকাল বা রাতে পরিমান মতো মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার। 








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উদায় ফ্লোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url