টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় - মোবাইল দিয়েই আবেদন করুন

টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় এই প্রশ্নটি এখন বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তিগত সব লেনদেনের ক্ষেত্রেই এটি একটি অপরিহার্য বিষয়। টিন সার্টিফিকেট হচ্ছে কর দাতা পরিচয় নম্বর 

টিন-সার্টিফিকেট-কিভাবে-করতে-হয়

যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর কর্তৃক প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে একজন নাগরিককে সরকারের কর পরিশোধের আওতায় আনা হয়। বর্তমানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, জমি কেনা, গাড়ি নিবন্ধন করা, ব্যবসার লাইসেন্স নবায়ন কিংবা ফ্রিল্যান্সিং ইনকাম সব ক্ষেত্রেই এখন টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা বিস্তারিতভাবে জানব টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয়, কেন এটি জরুরি এবং কীভাবে ঘরে বসেই এটি তৈরি করা যায়। 

পেজ সুচিপত্রঃ টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয়

টিন সার্টিফিকেট কী এবং কেন প্রয়োজন

টিন সার্টিফিকেট বা করদাতা পরিচয় নম্বর। টিন এর পূর্ণরূপ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (TIN - Tax Identification Number)। এটি হলো এমন একটি নম্বর যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনআরবি একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে করদাতা পরিচয় হিসেবে প্রদান করে। টিন সার্টিফিকেট বা করদাতা পরিচয় নম্বর দিয়ে সরকার বুঝতে পারে আপনি একজন করদাতা। আপনি কোনো বড় আর্থিক লেনদেন করেন, জমি বা ফ্ল্যাট কিনেন।

ব্যাংক হিসাব খুলেন কিংবা ব্যবসা নিবন্ধন বা ট্রেড লাইসেন্স যাই করেন না কেন আপনার টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। বর্তমানে আপনি অনলাইন কোনো ব্যবসা বা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাইলেও প্রয়োজন হতে পারে টিন সার্টিফিকেটের। তাই নিজেস্ব টিন সার্টিফিকেট থাকা বা টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় তা জানা আজকের যুগে প্রতিটি সচেতন নাগরিকের জন্য অপরিহার্য। 

কারা টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন

বাংলাদেশে প্রায় প্রত্যেক নাগরিকই টিন সার্টিফিকেট করতে পারেন। বিশেষ করে যাদের নিয়মিত আয় আছে বা আর্থিক লেনদেনের প্রয়োজন হয়। মনে করেন আপনি একজন চাকরিজীবী বা ব্যবসায়িক তাহলে আপনার টাকা পয়সা লেনদেন জনিত কাজ করা লাগে নিয়মিত, তবে আপানর জন্য টিন সার্টিফিকেট থাকাটা জরুরী। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ফ্রিল্যান্সার, ঠিকাদার, পেশাজীবী যেমন ডাক্তার, আইনজীবী, ইঞ্জিনিয়ার, এমনকি বিদেশে কর্মরত ভাইয়েরাও টিন সার্টিফিকেট করতে পারেন। 

জমি, ফ্ল্যাট বা গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক ঋণ গ্রহণ, কিংবা ট্রেড লাইসেন্স তৈরির জন্যও এটি বিশেষ প্রয়োজন। তাই ভবিষ্যতের সুবিধার জন্য আপনার জন্য জানা প্রয়োজন টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয়, কারণ এটি এখন একজন সচেতন নাগরিকের অপরিহার্য আর্থিক পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য হচ্ছে। আপনার যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন ঠিক তেমনি টিন সার্টিফিকেটও বর্তমানে আবশ্যক।

টিন সার্টিফিকেট বানাতে কি কি লাগে

টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় তা জানা গুরুত্বপূর্ণ  তবে নিজের জন্য আবেদন করার আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা আরও প্রয়োজনীয়। এতে আবেদন করার প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হয়ে যায়। ব্যক্তিগত আবেদনকারীর জন্য যা যা প্রয়োজনঃ
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ
  • সক্রিয় মোবাইল নম্বর
  • বৈধ ইমেইল ঠিকানা
  • স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ
  • প্রয়োজনে পাসপোর্ট সাইজ ছবি
যদি আপনার ব্যবসায়িক বা প্রতিষ্ঠানের নামে আবেদন করতে চান তবে প্রয়োজনঃ
  • ট্রেড লাইসেন্স
  • কোম্পানি ইনকর্পোরেশন সনদ
  • মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন 
  • প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য
  • ব্যবসার ঠিকানার প্রমাণ
  • প্রয়োজনে ছবি বা অতিরিক্ত আইডি লাগতে পারে
সুতরাং, টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় তা বুঝার পাশাপাশি এই সমস্ত নথি আগে থেকে প্রস্তুত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি নিজের জন্য নাকি প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করতে চান টা আগে ঠিক করে নিন। এবং প্রয়োজনীয় কাগজপাতি সংগ্রহ করে রাখুন, এতে আবেদন করা আপনার জন্য সহজ হবে। 

অনলাইন বা অফলাইন উভয় পদ্ধতিতে আবেদন করার সময় এগুলো সঙ্গে থাকলে সময় বাঁচে এবং কোনো জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় না। এক কথায় প্রয়োজনীয় নথি ঠিকঠাক থাকলে টিন সার্টিফিকেট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়।

টিন সার্টিফিকেটের জন্য কীভাবে আবেদন করতে হয়

টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় তা জানার জন্য বা আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপ দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ইনকাম ট্যাক্স অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান। গুগলে গিয়ে শুধু লিখেন ই টিন রেজিস্ট্রেশন বাংলাদেশ প্রথমেই সরকারি ওয়েবসাইটটাই চলে আসবে, ওখানেই ক্লিক করবেন। এবং ওয়েবসাইটে ঢুকার আগে আপনার ব্যবহৃত ইমেইল লগইন করে নিবেন।

তারপর নতুন ব্যবহারকারী বা Registration নামে একটা বোতাম পাবেন। ওখানে ক্লিক করলে একটা ফর্ম খুলবে। সেখানে আপনাকে নিজের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর আর ইমেইল দিতে হবে। অবশ্যই সঠিক এবং র্নিভূল তথ্য দিয়ে আবেদন করবেন। এরপর আপনার মোবাইলে একটা ভেরিফিকেশন কোড যাবে, সেই কোডটা দিয়ে একাউন্ট ভেরিফাই করে নেবেন।
টিন-সার্টিফিকেট-কিভাবে-করতে-হয়
এরপর লগইন করে ড্যাশবোর্ডে ঢুকবেন। সেখানে Apply for eTIN  বা ই-টিন আবেদন লেখা অপশন পাবেন ওইখানে ক্লিক করবেন। এখন একটা বড় ফর্ম আসবে। ফর্মে আপনার নাম, বাবার নাম, ঠিকানা, পেশা, আয়ের উৎস, জন্মতারি সব কিছু একদম ঠিকঠাক লিখবেন। বানান যেন ভুল না হয় বিশেষ করে ঠিকানাটা এনআইডির মতোই দিতে হবে।

যদি আপনার ব্যবসা থাকে তাহলে ট্রেড লাইসেন্স নম্বর ও ব্যবসার ঠিকানা দিয়ে দিবেন। সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর প্রয়োজনে একটা পাসপোর্ট সাইজ ছবি বা প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন এনআইডির কপি বা ট্রেড লাইসেন্স আপলোড করবেন। ফাইলগুলো আগে থেকে ফোনে বা কম্পিউটারে রেখে দিন তাহলে সহজ হবে। 

ফাইলগুলো আপলোড করলে সবথেকে ভালো হয় তাই চেষ্টা করবেন যুক্ত করার। সব শেষ হলে Submit বোতামে ক্লিক করুন। সাবমিট করার সঙ্গে সঙ্গে টিন নম্বর জেনারেট হয়ে যাবে। আপনি চাইলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে পারবেন এবং প্রিন্ট করে রাখতে পারেন নিজেন কাছে। 

এই সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে ব্যাংক হিসাব খোলা, ব্যবসা রেজিস্ট্রেশন বা পাসপোর্টের কাজেও লাগবে। যদি কোনো তথ্য ভুল হয়ে যায়, তাহলে ড্যাশবোর্ডে গিয়ে Update Information অপশন থেকে ঠিক করে নিতে পারবেন। যদি তা সম্ভব না হয় তবে হেল্পলাইল বা প্রয়োজনে নিকটস্থ কর অফিসেও যোগাযোগ করতে পারেন।

পুরো প্রক্রিয়াটি খুব সহজ এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। আপনি একটু মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেলটি ভালো করে পড়ে কাজ শুরু করলে ১৫ মিনিটের মধ্যেই নিজের নামে টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় তা শেষ করতে পারবেন কোনো কম্পিউটারের দোকান বা অফিসে যাওয়ারও দরকার নেই একদম ঘরে বসে আবেদন করতে পারবেন।

অফলাইনে টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয়

যদি আপনি অনলাইনে আবেদন করতে না পারেন বা সরাসরি অফিসে গিয়ে আবেদন করতে চান তাহলে অফলাইনে আবেদন করাটাও খুব কঠিন কিছু না। আপনি চাইলে সরাসরি নিকটস্থ কর অঞ্চল অফিসে বা ট্যাক্স অফিসে গিয়ে হাতে কলমে আবেদন করতে পারেন। এখন আমি আপনাকে ধাপে ধাপে বুঝিয়ে দিচ্ছি কিভাবে অফলাইনে আবেদন করবেন।

প্রথমেই আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের একটা ফটোকপি, দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং আপনার মোবাইল নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা সাথে করে নিয়ে রাখবেন। যদি আপনি ব্যবসার জন্য টিন সার্টিফিকেট করতে চান তাহলে ট্রেড লাইসেন্স, ব্যবসার ঠিকানা, আর প্রতিষ্ঠানের নাম লাগবে। এই কাগজগুলো একটা ফাইলে গুছিয়ে নিয়ে যাবেন। যেন সেখানে গিয়ে সমস্যা না হয়।

এরপর আপনি কর অফিসে গেলে রিসেপশন বা তথ্য ডেস্কে বলবেন আমি টিন সার্টিফিকেট করতে এসেছি। তারা তখন আপনাকে একটা ফর্ম দিবে। ফর্মে আপনার নাম, বাবার নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, পেশা, আয়ের উৎস ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে। যেমনটা অনলাইন ফর্মে ছিল। ফর্মটা মনোযোগ দিয়ে পূরণ করবেন। যেন কোথাও ভুল না হয়।

ফর্ম পূরণ হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় কাগজগুলো সংযুক্ত করে জমা দিন। অফিসের কর্মীরা আপনার তথ্য যাচাই করবে। যাচাই শেষে তারা আপনাকে একটি টিন নম্বর দিবে। অনেক ক্ষেত্রেই টিন সার্টিফিকেট হাতে পাওয়া যায় সেদিনই। তবে সেদিন না হলে এক দুই দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যায়। একবার আপনি টিন সার্টিফিকেট পেয়ে গেলে সেটি নিরাপদে সংরক্ষণ করবেন।

কারণ ভবিষ্যতে ব্যাংক একাউন্ট খোলা, পাসপোর্ট আবেদন, ব্যবসা নিবন্ধন বা সম্পত্তি কেনাবেচার ক্ষেত্রে এই টিন নম্বর খুব প্রয়োজন হয়। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, অফলাইনে করলে আপনি নিজেই কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জেনে নিতে পারেন কোন জায়গায় ভুল হয়েছে বা কোন কাগজ প্রয়োজন। এতে কাজটা আরো নিশ্চিতভাবে সম্পন্ন হয়।

তাই অনলাইন না করতে পারলেও চিন্তা নাই ভাই আপনি শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে কর অফিসে গেলেই সহজে বুঝে যাবেন টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই কাজটা শেষ করতে পারবেন।

টিন সার্টিফিকেট করার সময় সাধারণ ভুলসমূহ

অনলাইনে হোক বা অফলাইনে টিন সার্টিফিকেট করার সময় কয়েকটা ভুল প্রায় সবাই করে বসে। এই ভুলগুলোর কারণেই আবেদন বাতিল হয় বা সার্টিফিকেটে ভুল আসে। এই অংশটা অনেকেই এড়িয়ে যায় কিন্তু আসলে টিন সার্টিফিকেট করার সময় সাধারণ ভুলগুলো জানলে পুরো প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। নিচে আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাখ্যা করছি যেন আপনি এই ভুলগুলো না করেন।

নাম বা ঠিকানার বানান ভুলঃ সবচেয়ে বড় ভুল হলো নাম বা ঠিকানার বানান ভুল লেখা। অনেকে এনআইডিতে যেমন আছে তেমন না লিখে নিজের মতো করে দেয় বা ডাক নাম ব্যবহার করে। এতে তথ্য মিল না খেলে সার্টিফিকেটে ভুল আসে বা যাচাইয়ের সময় আটকে যায়। এবং এটি নিয়ে কাজ করতে গেলে সমস্যা হবে। তাই এনআইডি দেখে ফর্ম পূরণ করা সবচেয়ে নিরাপদ।

ভুল এনআইডি নম্বর দেওয়াঃ অনেকে তাড়াহুড়া করে ভুল এনআইডি নম্বর দেয়। এতে সিস্টেম আবেদন গ্রহণ করে না বা পরে ত্রুটি দেখায়। তাই এনআইডি নম্বর কপি করে অথবা ভালো করে চোখে দেখে টাইপ করবেন।

আয়ের উৎস বা পেশা ভুল নির্বাচন করাঃ অনেকে নিজের পেশা বা আয়ের উৎস ভুলভাবে সিলেক্ট করে। যেমন ব্যবসা না করে চাকরি দেয় বা ফ্রিল্যান্সার হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য লিখে ফেলে। এতে কর হিসাবের সময় সমস্যা হয়। আবার অনেকে কর বেশি দিতে হবে নিম্ন পেশা সিলেক্ট করে। এটি করা মোটেও উচিত না। 
টিন-সার্টিফিকেট-কিভাবে-করতে-হয়
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড না করাঃ যখন ট্রেড লাইসেন্স বা ছবি চাওয়া হয় তখন অনেকে পরে দেব ভেবে ফেলে রাখে। এতে আবেদন অসম্পূর্ণ থাকে। সব কাগজ আগে থেকে প্রস্তুত রাখলে সময়ও বাঁচবে ঝামেলাও কমবে। এবং আবেদন সহজ হবে। 

ভুল মোবাইল নম্বর বা ইমেইল দেওয়াঃ ভেরিফিকেশন কোড বা ওটিপি পাওয়া যায় মোবাইলে, তাই নম্বরটা সঠিক দিতে হবে। অনেকেই পুরনো বা বন্ধ নম্বর দেয়, ফলে কোড আসে না আর রেজিস্ট্রেশন আটকে যায়।

তথ্য যাচাই না করেই সাবমিট করাঃ সব তথ্য দেওয়ার পর একবার ভালো করে দেখে না নিয়েই অনেকে সাবমিট করে ফেলে। পরে দেখা যায় একটা সংখ্যা বা বানান ভুল। তাই সাবমিটের আগে একবার পুরো ফর্মটা রিভিউ করে নেওয়া জরুরি। অনলাইনে আবেদন করলে ঠিক বা আপডেট করার সুজগ থাকে তবে অফলাইনে হলে সমস্যা হতে পারে।

অন্যের মাধ্যমে ভুলভাবে আবেদন করানোঃ অনেকে নিজে না করে কারো হাতে দিয়ে দেয় “তুই করে দে ভাই” কিন্তু সে ভুল করে ফেলে। নিজের তথ্য অন্যের হাতে তুলে দিলে পরে সংশোধন করাও ঝামেলা হয়। তাই নিজের মোবাইল, ইমেইল ও এনআইডি নিজেই ব্যবহার করবেন। এবং সবক্ষেত্রে নিজেই কাজ করবেন। এতে কাজ স্বচ্ছ হবে। 

টিন সার্টিফিকেট চেক করার পদ্ধতি

বাংলাদেশে যেকোনো ব্যবসা, চাকরি বা ব্যাংক সংক্রান্ত কাজের জন্য এখন টিন সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকে জানেন না অনলাইনে নিজের টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় বা চেক করার পদ্ধতি কী। আসুন সহজে জানার চেষ্টা করি আবেদন করার পর অনলাইনে কিভাবে চেক করতে হয় টিন সার্টিফিকেট।

আপনি প্রথমে মোবাইল বা ল্যাপটপ দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এনবিআর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান। গুগলে লিখেন ই-টিন সার্টিফিকেট ভেরিভিকেশন বাংলাদেশ প্রথমে যে ওয়েবসাইটটি আসবে সেখানে ক্লিক করেন অথবা উপরের লিঙ্ক এ চাপ দিয়ে সরাসরি ওয়েবসাইটে চলে যান। ওয়েবসাইটে ঢুকে ই-টিন যাচাই লেখা অপশনটা খুঁজে বের করুন। 

এই অপশনটি সাধারণত হোমপেজের নিচের দিকে বা সার্চ বারে সহজেই পাওয়া যায়। এখন আপনার টিন নম্বর যেটা সার্টিফিকেটে আছে ওই ঘরে লিখবেন। তারপর নিচে থাকা যাচাই করুন বোতামে ক্লিক করবেন। একটু পরেই আপনার টিন নম্বর, নাম, ঠিকানা এবং নিবন্ধনের তারিখ স্ক্রিনে চলে আসবে। যদি টিন সার্টিফিকেট আসল হয়, তাহলে ওয়েবসাইটে আপনার পুরো তথ্য দেখাবে। 

কিন্তু যদি ভুল টিন নম্বর দেন বা নকল সার্টিফিকেট হয়, তাহলে সাইটে তথ্য পাওয়া যায়নি লেখা দেখাবে। সেই ক্ষেত্রে আবেদনপত্রে কোনো ভুল হয়েছে কিনা বা কারো মাধ্যমে ভুল সার্টিফিকেট করানো হয়েছে কিনা সেটা যাচাই করা দরকার। সব কিছু ঠিক থাকলে আপনি চাইলে সেই পেজ থেকে প্রিন্ট দিতে পারেন। প্রিন্টেড কপিটা ব্যাংক, অফিস বা ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা যায় কারণ সেটা সরকারি ডাটাবেসে যাচাইকৃত নথি হিসেবে গণ্য হয়।

টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি ট্যাক্স বা কর দিতে হয়

অনেকেই মনে করেন টিন সার্টিফিকেট থাকলেই নাকি ট্যাক্স দিতে হয় আসলে বিষয়টা এমন না। টিন সার্টিফিকেট হলো একজন করদাতার পরিচয় নম্বর। মানে এটি আপনাকে করদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে কিন্তু টিন থাকলেই ট্যাক্স দিতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। আবার ট্যাক্স দিতে হবে কি না তা নির্ভর করে আপনার বার্ষিক আয়ের ওপর। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী যদি আপনার বার্ষিক আয় সরকারের নির্ধারিত ট্যাক্সযোগ্য সীমার নিচে থাকে তাহলে টিন সার্টিফিকেট থাকলেও কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না।

বাংলাদেশে সাধারণ করদাতার জন্য বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার নিচে হলে ট্যাক্স বা কর দিতে হবে না। নারীদের এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য এই সীমা ৪ লক্ষ টাকা, প্রতিবন্ধীদের জন্য ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্সমুক্ত রাখা হয়েছে। তাই আপনার আয় যদি এই সীমার মধ্যে থাকে তাহলে টিন সার্টিফিকেট শুধু একটি পরিচয় হিসেবে থাকবে কোনাে ট্যাক্স দিতে হবে না।

উপসংহারঃ টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয়

এখন আর দৌড়াদৌড়ি না করে ঘরে বসেই অনলাইনে খুব সহজে জানা যায় টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয়। সরকারের ডিজিটাল সেবার ফলে এখন মাত্র কয়েক মিনিটেই আপনি আপনার নিজের টিন তৈরি করে নিতে পারবেন ঘরে বসেই। শুধু সঠিক তথ্য দেওয়া, এনআইডি মিলিয়ে নেওয়া আর ফর্ম পূরণের নিয়ম ঠিকভাবে অনুসরণ করলেই আপনার টিন সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে যাবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই।

বর্তমান সময়ে চাকরি, ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিং বা ব্যাংক সংক্রান্ত প্রায় প্রতিটি কাজেই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন। তাই দেরি না করে এখনই জেনে নিন টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করতে হয় এবং অনলাইনে নিজেই আবেদন করে ফেলেন নিজের টিন সার্টিফিকেট। এতে যেমন সরকারি নীতিমালা মেনে চলা হবে তেমনি ভবিষ্যতের আর্থিক ও অফিসিয়াল কাজগুলোও অনেক সহজ হয়ে যাবে। আশা করি বুঝাতে পেরেছি। এই সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে অথবা নতুন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

উদায় ফ্লোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

Md. Saleh Ahammad Uday
Md. Saleh Ahammad Uday
একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট। আমি অনলাইন ইনকাম, ব্লগিং, SEO ও টেকনোলজি নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করি। আমি অনলাইন বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে মানুষকে সাহায্য করি।